1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
টবে স্কোয়াশের চাষাবাদ পদ্ধতি | Bastob Chitro24
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

টবে স্কোয়াশের চাষাবাদ পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২২

স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। এটি বিদেশি জনপ্রিয় সবজি। দেখতে বাঙ্গির মতো লম্বা ও সবুজ। মিষ্টি কুমড়ার মতো এক ধরণের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। এটি সবুজ ও হলুদ দুই ধরনের রঙের হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে নতুনভাবে এটি চাষ শুরু হয়েছে। ভারতে চাষাবাদ হচ্ছে এরকম কয়েকটি জাতের -zucchini (Cucurbita pepo) একটি জনপ্রিয় জাত। পুষ্টিগুণ ও ব্যবহারঃ স্কোয়াশে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে। এর পাতা ও কাণ্ড সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সামার স্কোয়াশ তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।সামার স্কোয়াশ চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করাও সম্ভব। স্কোয়াসের জাতঃ বারি স্কোয়াশ-১ জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কতৃক অবমুক্ত হয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।

পরাগায়নের পর থেকে মাত্র ১৫-১৬ দিনেই ফল সংগ্রহ করা যায়। নলাকার গাঢ় সবুজ বর্ণের ফল। গড় ফলের ওজন ১.০৫ কেজি। এ জাতের জীবনকাল ৮০-৯০ দিন। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৪৫-৫০ টন। জলবায়ু ও মাটিঃ স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই মিষ্টি কুমড়া জন্মায়। অতএব সেসব জায়গায় স্কোয়াশ চাষ করা যাবে। স্কোয়াশ চাষের টবের মাটি তৈরিঃ মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার মেশাতে হবে। স্বাভাবিক মাটির সঙ্গে কমপক্ষে তিন ভাগের একভাগ জৈবসার ও এক ভাগ কোকোপিট মেশালে মাটিতে অবস্থিত জীবাণু সক্রিয় থাকবে। এঁটেল বা বালি মাটি হলে এর পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। মাটির অর্ধেক পরিমাণ হলে ভালো হয়।

বাড়িতে তৈরি আবর্জনা পচা সার বা পচা গোবর সারও দেয়া যায়। এক বস্তা মাটির সংগে গোবর সার এক বস্তা , পাতা পচা সার (যদি থাকে) অার এক বস্তা কোকোপিট বা কাঠের গুরো সরিষার খৈল ২৫০গ্রাম, টিএসপি ১০০ গ্রাম, মিউরেট অব পটাশ ১০০ গ্রাম এবং পাথর চুন ৫০গ্রাম। বীজ বপনের সময় : শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্র মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে আশ্বিন মাসে (আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ) জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। ফুল ও ফল আসার সময়ঃ বীজ রোপণের অল্প দিনের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে।

পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। বীজ লাগানো থেকে ফল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। ফুল ও ফল দেখতে অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। ৫৫-৬০ দিনের ভিতর স্কোয়াশ পাওায় যায়। স্কোয়াশের বপন এবং রোপণ প্রযুক্তি: স্কোয়াশ বীজ সরাসরি জমিতে রোপণ করা যায়। তবে ছোট আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে বা প্লাস্টিক ট্রেতে করে তা টবে রোপণ করলে ভালো হয়। বীজ বপনের ৪-৬ সপ্তাহ পরে ফল ধরা আরম্ভ হবে। স্কোয়াশ চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে টবের মাটির সাথে জৈব সার মিশিয়ে রাখতে হবে। জৈব সার বলতে পুরানো পচা গোবর সার হতে পারে বা কেঁচো জৈব বা ভার্মি জৈব সার হতে পারে । বীজ বপন করার ১০-১৫ দিনের ভিতর চারা বের হয়ে গাছ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে। মালচিং: স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন আগাম ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। স্কোয়াশের রোগবালাই ও পোকামাকড়ঃ স্কোয়াশের মাছিপোকাঃক্ষতির ধরণঃ এই পোকা স্কোয়াশের কচিফল ও ফুলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফল ও ফুলের ভিতর কুরে কুরে খায় যার ফলে ফল ও ফুল পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়।

এই পোকার আক্রমণের ফলে প্রায় ৫০-৭০ ভাগ ফল নষ্ট হয়ে যায়। দমন ব্যবস্থাপনাঃ আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে। জমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করতে হবে। মাছির আক্রমণ বেশি হলে এসিমিক্স ৫৫ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ০.৪ গ্রাম/ লিটার অথবা টিডো ১ মিলি/লিটার অথবা নাইট্রো / সবিক্রন ১মিলি/লিটার বা ইমিটাফ ২০ এস এল ১ মিলি/ লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে করতে হবে। রেড পামকিন বিটলঃ ক্ষতির ধরণঃ পামকিন বিটলের পূর্ণবয়স্কপোকা চারা গাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে। দমন ব্যবস্থাপনাঃ চারা আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলে। ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। চারা রক্ষার জন্য পাতায় ছাই ছিটাতে হবে। চারা অবস্থায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারা গুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমন থেকে গাছ বেঁচে যায়। সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলি অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে অথবা রেলোথ্রিন/ রিপকট ১ মিলি/ লিটার পানিতে ১০-১২ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে। জাবপোকাঃ ক্ষতির ধরণঃ জাবপোকার আক্রমণে মিষ্টি কুমড়ার বাড়ন্ত ডগা ও পাতা হলুদ হয়ে যায়। গাছ তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং ফলন গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়।

মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় জাবপোকার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এদের সংখ্যা কমে যায়। দমন ব্যবস্থাপনাঃ প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ বা সাবানগোলা পানি সেপ্র করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে সবিক্রন/ টিডো/ ইমিটাফ ১মিলি/লিটার পানিতে স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনীয় সর্তকতাঃ চারা বের হওয়া থেকে ৫ দিন পর পর সাদা মাছি বা জাব পোকা দমনে কমপক্ষে ভালো কোম্পানির ২/৩ টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ ব্যবহার করুন । সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করলে অবশ্যই ভালো কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। ভাইরাস আক্রান্ত গাছকে কোন প্রকার ট্রিটমেন্ট না করে সরাসরি তুলে ফেলে গাছটি মাটি চাপা দিতে হবে ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি