দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস : ৩৬৭ ও ২৭৪
বাংলাদেশ ইনিংস : ২৯৮ ও ১১/৩ (৬ ওভার)
সকাল থেকেই গোমড়ামুখো ডারবানের আকাশ। আগের দিনের শেষ দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল, গতকাল ক্ষণে ক্ষণে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। তবে দিনের প্রথম সেশনে অন্তত বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেল না। বিকেলের দিকে একটু বন্ধ ছিল খেলা। তবে প্রোটিয়াদের বড় লিডের শঙ্কা তৈরি হয়েছে শুরু থেকেই। আম্পায়ারের কলগুলো বাংলাদেশের বিপক্ষে যাচ্ছিল এবং যোগ হচ্ছিল সফরকারীদের বাজে ফিল্ডিংসহ ক্যাচ মিসের মহড়া। তাতে সুবিধাজনক স্থানে থাকার কথা ছিল না মুমিনুল বাহিনীর। জয়ের জন্য মুমিনুল হকদের চতুর্থ ইনিংসে করতে হবে ২৭৪ রান, গড়তে হবে রেকর্ড। আগে তাদের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়।
প্রথম ইনিংসের দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬৭ রানের জবাব দিতে নেমে ২৯৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। সফরকারীদের হয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৬৯ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিকরা। তৃতীয় দিন শেষে ডিন এলগারের দলের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৬ রান। ৭৫ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিন সব ক’টি উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে লিড ২৭৪ রানের। আজ পঞ্চম দিনে এই রান তাড়া করা কঠিনই হলো বাংলাদেশের জন্য। বিপরীতে প্রোটিয়াদের চাওয়া ১০ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংস সুখকর হলো না বাংলাদেশের। শুরুতেই হারালো তিন উইকেট। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৬ ওভারে ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ডারবান টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯ রান করা ওপেনার সাদমান ইসলাম এবার রানের খাতাই খুলতে পারলেন না। ২৭৪ রানের টার্গেটে নেমে বাংলাদেশ ৪ রানে হারাল প্রথম উইকেট। সাদমানকে সিমন হার্মার প্রথম ওভারেই স্লিপে কিগান পিটারসেনের ক্যাচ বানান। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় ফিরলেন ৪ রান করে হারমারের বলে পিটারসেনকে ক্যাচ দিয়ে। অধিনায়ক মুমিনুল এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন ২ রানে মহারাজের বলে।
আগের দিনের বিনা উইকেটে ৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের শুরুতেই উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের মিডল স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডে লাগলে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান এলগার। এরপর থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার সারেন এরউই এবং এলগার। তাদের জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বল সুইংয়ে করে স্ট্যাম্পে ঢোকার সময় এরউইয়ের প্যাডে লাগে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। তাতেই ৮ রানে সাজঘরে ফেরেন এরউই।
ক্যাচ না পড়লে ইবাদতের উইকেটের কলামে আরো সংখ্যা যোগ হতে পারত। উইকেটের স্বাদ পেতে পারতেন মেহেদী হাসান মিরাজও। কিন্তু নাজমুল হোসেন আর ইয়াসির আলীর ‘মাখন-মাখা’ হাত সেটা হতে দেয়নি। দুবারই বেঁচে গিয়েছেন এলগার। ২০তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন, যা ধরতে পারেননি নাজমুল। তিন ওভার পরে আবারো বাংলাদেশের আফসোস বাড়িয়েছে এই ক্যাচ মিস। এবার ইবাদতের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ, যা ফেলে দিয়েছেন ইয়াসির আলী। দুবার ‘জীবন’ পাওয়া এলগার এর কিছুক্ষণ পরেই ক্যারিয়ারের ২১তম অর্ধশতক তুলে নেন।
সেশনের শেষ দিকে আবারও বল হাতে তুলে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। কাঁধের ব্যথায় ভুগছিলেন আগের দিন থেকেই। ব্যথার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে বল করতে পারেননি বাংলাদেশ দলের এই পেসার। গতকাল বোলিং করতে পারবেন কি না, এ নিয়েও সংশয় ছিল। অবশেষে ৭৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করা এলগারকে ফিরিয়ে উইকেটের দেখা পান তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ভেতরে ঢোকার সময় ডিফেন্স করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন এলগার।
বল প্যাডে লাগলেও আরো একবার আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিতে ভুল করেননি মুমিনুল। তাতে ৬৪ রানে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক। এলগারের বিদায়ের পর আউট হয়েছেন কেগান পিটারসেনও। মিরাজের গুড লেংথ বল ভালোভাবে খেলতে পারেননি এই উইকেট কিপার ব্যাটার। শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে দারুণ ক্যাচ নেন মাহমুদুল হাসান জয়।
৩৬ রান করা পিটারসেন ফেরার পর আউট হয়েছেন টেম্বা বাভুমাও। ডানহাতি এই ব্যাটারকে ফেরান এবাদত। স্লিপে দাঁড়িয়ে ইয়াসির দারুণ এক ক্যাচ নিলে ৪ রানে সাজঘরের পথে হাঁটেন বাভুমা। পঞ্চম উইকেটে ব্যাট করতে নামা রায়ান রিকেলটন যখন এক প্রান্ত সামলাতে ব্যস্ত তখন অপরপ্রান্তে থাকা দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। সাদমানের হাতে ক্যাচ তুলে ৬ রানে বিদায় নেন কাইল ভেরিয়েন্নে। দারুণ ক্যাচে বাভুমাকে ফেরানো ইয়াসিরের হাতে বল তুলে দিয়ে ১১ রানে বিদায় নেন ভিয়ান মুল্ডার। এরপর বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি ব্যাট করতে নামা কেশভ মহারাজও। তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ৫ রানে বিদায় নেন তিনি। দলীয় রান তখন ১৮৩।
প্রথম ইনিংসে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দারুণ ভুগিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সুযোগ দেননি সফরকারীরা। দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ১ রানে হারিয়েছে শেষ তিন উইকেট। সিমন হারমারকে ১১ রানে রানআউট করেন নুরুল হাসান সোহান, লিজাড উইলিয়ামসকে (০) রানআউট করেন সাদমান ও লিটন দাস, অলিভারকে (০) এলবিডব্লিউ করেন এবাদত। রিকেলটন ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। স্বাগতিকদের ২০৪ রান থামিয়ে লক্ষ্যটা তিন শ’র নিচে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৩টি করে উইকেট নেন এবাদত ও মিরাজ। দুই উইকেট পান তাসকিন।