1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
গ্রামে আসে ঢাকায় যায় | Bastob Chitro24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

গ্রামে আসে ঢাকায় যায়

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২

শতভাগ বিদ্যুতের চিত্র গ্যাস সঙ্কটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে বাড়ছে লোডশেডিং লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী

দেশে কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ। রান্নার চুলা থেকে শিল্পের চাকাও ভুগছে গ্যাস সঙ্কটে। কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের কারণে দেশের প্রতিটি এলাকায় থাকছে ১ থেকে ২ ঘণ্টার লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের বিদ্যুৎ উদপাদন কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন সেখানে দেওয়া হচ্ছে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এদিকে দেশের প্রতিটি গ্রামে সারাদিনে বারবার বিদ্যুৎ আসে; কিন্তু সব সময় থাকে না। অন্যদিকে ঢাকা বিদ্যুৎ থাকলেও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ঘন ঘন চলে যায়, কিন্তু বলে জানা গেছে। তিতাসের চাহিদার তুলনায় ২০০ প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম দিচ্ছে পেট্রোবাংলা বলে জানা গেছে।

দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আরইবির কর্মকর্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। গতকাল সরবরাহ কমেছে ৮৫১ মেগাওয়াট। সারা দেশেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোয়। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়াতেও বেড়েছে লোডশেডিং। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চাউলের চাতাল মালিক রাজু আহমেদ বলেন, বন্যার কারণে অনেক এলাকায় গত ২০ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, তারপরও শহর এলাকা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গত রোববার থেকে এ পরিস্থিতি চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায়।
বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম আবার চড়া। খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে না সরকার। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, এলএনজি আমদানি কমায় গ্যাস সরবরাহ গত কয়েকদিনে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দামও চড়া। দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান করছে বিপিসি। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। গত ২১ মার্চ দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের পর দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ মুজিববর্ষে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করলেও সেটি আর থাকছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে লোডশেডিং হারিয়ে গেছে বলেই সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, এর মধ্যেই গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার খবর মিলছে। এ অবস্থার মধ্যে রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় দেওয়া এক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে। সে কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় লোডশেডিং বেড়ে। এটা কিছু থাকবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বই সাশ্রয়ী হচ্ছে। এলএনজির দাম কমলে স্পট থেকে আমদানি করা হবে। এখন দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়া রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে অভিযোগ করছেন দুই দিন ধরে।
গত ১৩ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে যেসব উন্নয়ন করেছে তার মধ্যে রয়েছে, ৫ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। এছাড়া মোট ৩ লাখ ৬১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন গ্রাহকের সংযোগ সাড়ে ৩ কোটি। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ ভাগ থেকে ৯৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোওয়াটে গিয়ে ঠেকেছে। পাশাপাশি সিস্টেম লস ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছে। এর বাইরে ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক কোটি প্রিপেইড মিটার প্রস্তুত। সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, সোলার হোম স্থাপন করা হয়েছে ৬০ লাখ। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে এখন ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। দেশে ৭৭৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। সর্বমোট ৪৬ লাখ ৭৭ হাজার প্রি-পেইড ও স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। সেচ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ই-টেন্ডারিং, ই-নথি, ই-আরপি, স্ক্যাডা, জিআইএসসহ অনলাইনভিত্তিক সফটওয়ার চালু করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে পেপারলেস অফিস স্থাপন করা হচ্ছে।
পিকিং প্ল্যান্টগুলো মূলত ওপেন সাইকেল গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে আর বেজ লোড প্ল্যান্টগুলো পরিচালিত হয় কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে। সাধারণত বেজ লোডের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হয়ে থাকে কয়লা ও গ্যাসচালিত কিংবা জলবিদ্যুৎ চালিত অপরদিকে পিক লোড বা পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো হতে পারে ফার্নেস অয়েল বা ডিজেলচালিত। দেশের অধিকাংশ বেজ লোড পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সরকারি মালিকানাধীন। আর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো হলো রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট যা বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত। ২০১০ সাল নাগাদ তরল জ্বালানি দ্বারা পরিচালিত কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট দ্বারা দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫ শতাংশ উৎপাদিত হতো, ২০১১ সাল নাগাদ যা দাঁড়ায় ১৩ শতাংশ এবং ২০১২ সাল নাগাদ যা ছিল ১৭ শতাংশ। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ১১টি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ছিল গ্যাস চালিত এবং ১৭টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ছিল। আর এভাবে উত্তরোত্তর উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে শতভাগ বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। একই সাথে বিশ্বের ১৩তম আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশে পরিণত হলো দেশর।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ সরবরাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত রোববার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য চাহিদা ধরা হয়েছে ২২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। কিন্তু এর বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে ৯৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। সার উৎপাদনেও চাহিদার অর্ধেকের কম গ্যাস সরবরাহ করার পূর্বাভাস রয়েছে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে। সব মিলিয়ে সারা দেশে ২৮৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার পূর্বাভাস দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে, ১৪২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি স্বল্পতার কারণে আমরা ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট কম উৎপাদন করতে পারব বলে জানিয়েছেন পিডিবির একজন কর্মকর্তা। পিডিবির ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে ক্যাপটিভসহ মোট উৎপাদন ক্ষমতা সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এরমধ্যে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫১ শতাংশ, তেলভিত্তিক এইচএফও ও এইচডিও কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩৪ শতাংশ। কয়লা থেকে প্রায় ৮ শতাংশ, আমদানি থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে। বাকিটা পূরণ করে সৌর ও পানিভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি। পিডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি সরবরাহ ঠিক থাকলে চাহিদারও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার মতো যথেষ্ট কেন্দ্র আমাদের রয়েছে। কিন্তু আজকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাসের যে চাহিদা রয়েছে, তার অর্ধেকও হয়তো আমরা পাব না।
দেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলার দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ সরবরাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা না হয়েছে, রোববার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য চাহিদা ধরা হয়েছে ২২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। কিন্তু এর বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ করা যাবে ৯৬০ মিলিয়ন ঘনফুট। সার উৎপাদনেও চাহিদার অর্ধেকের কম গ্যাস সরবরাহ করার পূর্বাভাস রয়েছে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনে। সব মিলিয়ে রোববার সারা দেশে ২৮৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার পূর্বাভাস দেখানো হয়েছে। এদিকে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সরকারিভাবে এলএনজি আমদানি করে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। সরকারি এ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, এলএনজি কেনার কাজটি তারা করলেও সিদ্ধান্ত দেয় পেট্রোবাংলা ও সরকার। গত মাসে চট্টগ্রামবন্দর থেকে তিনটি কার্গো (জাহাজ) এসেছে। দিনে ৭৫ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট করে সরবরাহ করা হয়েছে। এ মাসে কয়েক দিন ধরে ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। গত রোববার থেকে সরবরাহ এমনটা কমে যায়। এখন শুধু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে আসা এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ ইনকিলাবকে বলেন, পেট্রোবাংলা থেকে আমাকে প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন গ্যস কম দিচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকদের গ্যাস কম দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩০৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে। বর্তমানে আটটি গ্রাহক শ্রেণির অনুমোদিত গ্যাস লোড অনুযায়ী দৈনিক চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন কম হওয়ায় দৈনিক প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এলএনজি আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ১১৪ টাকা দিয়ে এলনজি কিনে ৬ টাকায় বিক্রিয় করতে চায় না সরকার।
তিতাস সূত্রে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, দনিয়া, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, বাড্ডা ও কেরানীগঞ্জ এলাকায় একদমই গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। আর কাঁঠালবাগান, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। কোনোরকমে রান্নার চুলা জ্বলছে এসব এলাকায়। সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার শিল্পকারখানাও গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্যাসের অভাবে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না বিতরণ কোম্পানি। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে দিনে গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিকাংশই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তাই গতকাল থেকে সারা দেশে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। গতকাল চাহিদার চেয়ে ৩০০ মেগাওয়াট কম সরবরাহ পাচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। দিনে এ সংস্থার চাহিদা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, সরবরাহ পাচ্ছে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। রাজধানীর আরেকটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর সরবরাহ কমেছে দিনে ১৫০ মেগাওয়াট। এ সংস্থার দিনে চাহিদা ১ হাজার মেগাওয়াট, পাচ্ছেন ৮৫০ মেগাওয়াট।
ডিপিডিসির ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান ইনকিলাবকে বলেন, গ্রাহকের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাগাভাগি করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। জরুরিসেবা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।
বগুড়ার গ্রাহক জাহাঙ্গীর অভিযোগ করে বলেন, দিনে ১৪ ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হচ্ছে বগুড়ায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা বাসিন্দার সালমা রশিদ বলেন, প্রতিদিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রফিক মোহাম্মদ বলেন, সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে বেড়েছে লোডশেডিং চলছে কয়েকদিন ধরে। বারবার ফোন করে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। আগামীতে সব সমস্যা সমাধান করা হবে।
রাজশাহী ও খুলনা কুড়িগ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং
আমাদের রাজশাহী ব্যুরো জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে স্মরণকালের ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ এখন আর যায় না, মাঝে মাঝে আসে! পহেলা জুলাই থেকে এ অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আধাঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তাই দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ মিলছে মাত্র ১২ ঘণ্টা! ঠিক কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও সদুত্তর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ বিভাগ। বৃষ্টিহীন আষাঢ়ে কাটফাঁটা রোদ আর গরমের দাপটে জনজীবনে যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন মিলছে না বিদ্যুৎ। অস্বাভাবিক ও অসহনীয় লোডশেডিংয়ে তাই রাজশাহীর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নাকাল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রাজশাহীসহ এ বিভাগের আট জেলায় তিন দিনেরও বেশি সময় থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। এতে অফিসে-আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে। জেনারেটর, আইপিএস ও ইউপিএস কোনো কিছুই দিয়েই অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি স্বাভাবিকভাবে চালানো যাচ্ছে না। পচতে শুরু করেছে বাড়ির ফ্রিজের মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ফলমূলও। ভোর নেই, সকাল নেই, দুপুর নেই, সন্ধ্যা নেই, রাত নেই- বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলছে প্রতি আধাঘণ্টা পর পর। কোনো কোনো এলাকায় ১০-২০ মিনিট পরপরও লোডশেডিং দিচ্ছে নেসকো।
নেসকো রাজশাহী বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ জানান, এটি রাজশাহীর একার নয়, এটি এখন জাতীয় সমস্যা। জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তাদের বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
খুলনা জেলা সংবাদদাতা : খুলনা অঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যে কোনো সময় চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। কোনো কোনো এলাকায় একটানা এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রাম ছাড়া শহর এলাকাতেও ইদানীং লোডশেডিং আবারও দেখা দিয়েছে। গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও শহরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতির কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অতিষ্ঠ উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়ার লুকোচুরি খেলায় দুর্বিষহ বেকায়দায় পড়েছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষজন। প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম বলে বিদ্যুতের এই লোডশেডিং। এদিকে লোডশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত ওয়েল্ডিং, ঝালাই, বিদ্যুৎচালিত মোটর, মেকানিকের যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিক মতো কাজ করতে পাড়ছে না ব্যবসায়ীরা। একদিকে ঘনঘন লোডশেডিং অন্যদিকে ঝাপসা গরম প্রকট আকার ধারণ করছে। কারণ বিদ্যুৎ এ অভ্যস্ত এখন মানুষ। এদিকে কেরোসিনের বাতি কিংবা মোমবাতি ব্যবহার করেন না মানুষ। ফলে জেলার ৯টি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন বড় বিপাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি