আগামী ডিসেম্বরেও কুষ্টিয়ায় সড়কে চলাচলে স্বস্তি মিলছে না পরিবহন চালক থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের। বিশেষ করে কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা মহাসড়কের প্রশ্বস্তকরন কাজ ও শহরের ফোর লেনে উন্নতিকরন প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পাথর, বিটুমিনসহ সড়ক নির্মানে ব্যবহৃত নানা পণ্যের দাম বাড়ায় ঠিকাদাররা বেকায়দায় পড়ে গেছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে প্রকল্পের মেয়াদ। অন্যদিকে ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান কম হওয়ায় যথাসময়ে কাজ তোলা নিয়েও ঠিকাদাররা চাপের মুখে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৪৬ কোটি টাকার সামান্য বেশি। তাও তিন জন ঠিকাদারের অনুকুলে। এছাড়া সড়কের মাঝে ইলেকট্রিক পোল রেখে কাজ চলছে ফোর লেনের। সড়ক ও জনপথ অফিস সূত্র জানিয়েছে, এই মুহুর্তে কুষ্টিয়ার দুটি মহাসড়ক ও শহরের ফোর লেনের কাজ চলমান। ৫টি প্যাকেজে এসব কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলামপুর পর্যন্ত ১৩.২৫ কিলোমিটার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের এই অংশে বর্ধিতকরন যথাযথ মানে উন্নীতকরন কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আলামপুর থেকে বটতৈল পর্যন্ত ৬.৪০ কিলোমিটার সড়কের কাজ করছে রানা বিল্ডার্স লি:। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। এদিকে শহরের মূল সড়ক ফোর লেনে উন্নতিকরন কাজ চলছে। ৫ কিলোমিটার ৫ কিলোমিটার করে মোট ১০ কিলোমিটার সড়ককে ফোর লেনে উন্নতিকরন, দুই পাশে ড্রেন ও মাঝে ডিভাইডার দেওয়া হচ্ছে। শহরের বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ করছে জহুরুল লিমিটেড। এ কাজের জন্য ব্যায় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী মোড় পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ পেয়েছে ইস্পক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কাজের ব্যয় ১৪৭ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা ১০ মাইল পর্যন্ত ১১.৮০ কিলোমিটার অংশের কাজ পেয়েছে এমএম বিল্ডার্স। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এসব কাজ গত ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর একনেকে পাশ হয়। এরপর তা অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি। কাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ফোর লেনের কাজ চলছে দুই অংশে। এর মধ্যে ভৌত কাজ ছাড়াও আর্থিক কাজ রয়েছে। সড়কের পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে ছোটবড় বেশ কয়েকটি কালভার্ট। এছাড়া ড্রেনের কাজ চলমান আছে। তবে বৃষ্টি ছাড়াও সড়কের মধ্যে ইলেকট্রিক পোল থাকায় কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। এর মধ্যে মজমপুর থেকে বটতৈল পর্যন্ত কাজের প্রায় অনেকটায় শেষ হয়েছে। একই অবস্থা মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী অংশের। তবে সব থেকে স্লোগতিতে কাজ চলছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ত্রিমোনহী থেকে ভেড়ামারার ১০ মাইল অংশে। এই অংশে নিম্ন কাজের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ সড়ক ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিনের প্রায় ৩০টি জেলার পরিবহন চলাচল করে। যথাসময়ে কাজ শেষ না হলে দুর্ভোগ বাড়বে। খুড়াখুড়ির কারনে এখন প্রতিদিন যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে পরিবহন চালক ও যাত্রীদের। এদিকে কাজের আগে পোল না সরানোর কারনে রাস্তার কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। আগে থেকে এসব পোল না সরানোর ফলে কাজ ফেলে রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি ড্রেনের কাজেও অংশে জায়গায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ করে ফোর লেনসহ সড়ক চওড়া ও যথাযথ মানে উন্নীতকরনের কাজের অগ্রগতি আছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা কাজ শেষ করার চেষ্টা করবেন। বৃষ্টি মৌসুম এসে পড়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে ড্রেন নির্মানে সময় লাগছে বেশি। কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা বেকায়দায় পড়ছেন। এদিকে পুরাতন রেটে কাজ করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। হঠাৎ করে বিশ্ববাজারে বিটুমিন ও পাথরের দাম বাড়ায় সংকটে পড়েছেন তারা। এ নিয়ে যথা সময়ে কাজ তুলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একাধিক ঠিকাদার। জহুরুল লিমিটেডের মালিক জহুরুল ইসলাম বলেন, পাথরের দাম বেড়েছে কয়েগুন, একই অবস্থা বিটুমিনের ক্ষেত্রে। তারপরও এ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ একেবারেই কম। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার তাড়া রয়েছে। এই অবস্থায় চারদিকে সংকট বাড়ায় ঠিকাদাররা অনেকটা অসহায়। অগ্রীম টাকা দিয়েও পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, ৫৭৪ কোটি টাকার প্রকল্পে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা। তাও ৫জন ঠিকাদার ছাড়াও ইলেকট্রিক পোল অপসারনের এ জন্য এ অর্থ থেকে বিদ্যুত বিভাগকে ভাগ দিতে হচ্ছে। এতে ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ। কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারার ১০ মাইল পর্যন্ত কাজ করা প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্সের প্রজেক্ট ডাইরেক্টটর (পিডি) আনিসুর রহমান বলেন, আমরা অন্যদের তুলনায় কার্যাদেশ পেয়েছি দেড় বছর পর। কাজ করু করেছিলাম গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার কাজ শেষ করেছি। আমাদের মেয়াদ আছে ২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। মাত্র ১২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সময়মতো পেলে কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’ একজন ঠিকাদার বলেন,‘ ব্যাংক থেকে লোন করে এনে আমাদের কাজ করতে হয়। তারপরও প্রকল্পে বরাদ্দ একেবারেই কম। সময়মত কাজ তোলার তাড়া রয়েছে। বিল কবে পাওয়া যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তারপরও আমরা যথাসময়ে কাজ তোলার চেষ্টা করছি। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ভৌত খাতে ৪৭ ভাগ ও আর্থিক খাতে মাত্র ২৪.১৪ ভাগ। প্রকল্পের মেয়াদ আর মাত্র ৭ মাস রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিতে না পারলে ঠিকাদারের জরিমানা হতে পারে। পাশাপাশি তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. সেলিম তোহা বলেন,‘ সড়কের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে হবে। বিশেষ করে রমজানে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে চলাচল করতে গিয়ে মানুষকে ভোগান্তি পড়তে হয়। ঈদুল আযহার আগে যাতে মানুষ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারকে।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফোর লেনসহ অন্য সড়কের কাজ চলমান আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কাজের মেয়াদ বাড়ার কোন লক্ষন নেই। কাজের মান যাতে ভালো হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে ঠিকাদারকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছি।