কুষ্টিয়ার মিরপুরে গরু বিক্রীর টাকায় মা মহিরন নেছা (৬০)র চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দের জেরে ছেলে সাজু (৩৫)র বেধরক হাতুরি পিটুনিতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম মামা আয়ুব আলী(৫৫) নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার বিকেলে মিরপুর উপজেলার নিমতলা বাজার থেকে বাজার করে মটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ভাগ্নে সাজু তার মামার উপর এই হাতুরি হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর রক্তাক্ত জখমী অচেতন আ্য়ুব আলীকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়ুব আলীর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। শনিবাবর সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিসাধীন আয়ুব আলীকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত: ঘোষনা করেন বলে নিশ্চিত করেন পরিবারের লোকজন। নিহত আয়ুব আলী(৫৫) হলেন- মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের চৌদুয়ার বিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন এখনও কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি পুলিশ। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে আয়ুব আলী নিমতলা বাজার থেকে সদায় করে মটরসাইকেলে তার নিজ বাড়ি উপজেলার চৌদুয়ার বিলপাড়ায় যাওয়ার পথে সাগর খালী নদীর নিকটস্থ রাস্তার পাশর্^স্ত একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সাজু আকস্মাৎ আয়ুব আলীর উপর হামলা করে। এসময় ধাক্কা দিয়ে মটরসাইকেল ফেলে দিয়ে হাতোর হাতুরি দিয়ে এলোপাথারি ও বে-ধড়ক পিটুনি দেয়। আয়ুব আলীর মাথা ও মুখমন্ডল রক্তাক্ত জখমীর সৃস্টি হয় এবং আয়ুব আলী অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অচেতন হয়ে আয়ুব আলী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মৃত ভেবে এবং আশপাশের লোকজনকে ছুটে আসতে দেখে সাজু পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়দের সাহায্যে পরিবারের লোকজন আয়ুব আলীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিহত আয়ুব আলী ভাইপো/ভাতিজা হুমায়ুন কবিরের অভিযোগ, ‘আমার ফুফু মহিরন নেছার ছেলে সাজু খারাপ প্রকৃতির লোক, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়ায়। একটা হত্যামামলার আসামী হওয়ায় দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে পলাতক হয়ে ভারতে অবস্থান করে। আমার ফুফু মহিরন নেছা অনেকদনি ধরে চরম অসুস্থ্য হয়ে বিছানাগত। অভাবে সংসারে আমাদের সাথেই থাকে ফুফু। গতমাসে পারিবারিক সিদ্ধান্তেই ফুফু মহিরণের একটা গরু ছিলো সেটি বিক্রী করা হয়। ওই টাকা দিয়ে ফুফুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন চাচা আয়ুব আলী। হঠাৎ ফুফুর ছেলে সাজু বাড়িতে এসে মায়ের গরু দেখতে না পেয়ে এবং সেটি বিক্রী করা হয়েছে শুনেই চাচা আয়ুব আলীর উপর চড়াও হয় এবং গরু বিক্রীর টাকা তাকে দেয়ার দাবি করে। কিন্তু গরু বিক্রীর টাকা চিকিৎসার ব্যয়ে খরচ হয়েছে এই কথা সে মানতে নারাজ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মামা আয়ুব আলীর সাথে ভাগ্নে সাজুর দ্বন্দে সৃষ্টি হয় এবং আয়ুব আলীকে হত্যার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত সত্যিই সাজু তার মামা আয়ুবকে খুন করলো। স্থানীয় ইউপি সদস্য রাকাত আলী ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন, ৫/৬দিন পূর্বে আয়ুব আলীর সাথে গরু বেচার টাকা নিয়ে তার ভাগ্নে সাজুর ঝগড়া হয়। সাজুর দাবি ছিলো একেবারেই অন্যায্য। ওর মা মহিরন দীর্ঘদিন অসুস্থ্য ছিলো, সাজু তো পালায়ে বেড়ায়, ওর মায়ের কোন খোঁজই নেয় না। গরু বেচা ট্যাকা দিয়ে চিকিৎসা কইরেচে তাতে সমস্যা কি ? তাই বুইলি এর জন্যি মামাকে খুনই কইরলে! মিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) গোলাম মস্তফা জানান, ‘শনিবার দুপুরে নিহত আয়ুব আলীর মরদেহ রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যাকান্ডের অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার পর থেকেই নিহতের ভাগ্নে অভিযুক্ত সাজু পলাতক থাকায় এখনও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রাজ্জাকের বিরুদ্ধে এর আগে আরও একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভারতে পলাতক ছিলো। তবে পুলিশ সাজুকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। সাজু স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।