1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ঈদ ঘিরে ডিজিটাল প্রতারণার জাল | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

ঈদ ঘিরে ডিজিটাল প্রতারণার জাল

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২

ব্যক্তিগত কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই এখন আর সরাসরি মার্কেটে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে চান না। বাজার বা মার্কেটে না গিয়ে ঘরে বসে এক ক্লিকেই পছন্দসই পণ্য হাতে আসায় মানুষ অধিক হারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ডিজিটাল বা অনলাইন কেনাকাটায়। তাছাড়া অনলাইনে ডিজিটাল হাট যেখানে যখন খুশি অর্ডার করলেই বাসায় পৌঁছে যাবে পণ্য। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় হয়েছে ডিজিটাল প্রতারক চক্র। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে অনলাইন ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করে ঘটছে এ ধরনের প্রতারণা। ডিজিটাল প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এমন প্রায় শতাধিক চক্র ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারির আওতায় রয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র। পোশাক অর্ডার করলে পাঠানো হয় পুরাতন ছেঁড়া কাপড়। মুঠোফোনের অর্ডারে পাঠানো হয় খালি প্যাকেট।

কখনো পণ্য চাইলে উল্টো গালিগালাজসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করা হয়। অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগগুলো হলো, সময়মতো পণ্য ডেলিভারি না পাওয়া, ডেলিভারি পাওয়া পণ্যের গুণগতমান ঠিক না থাকা এবং কার্ড পেমেন্টে টাকা ফেরত পেতে বেশি সময় লাগা। এ ছাড়া আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনো বা পরিমাণে কম দেয়া, আবার কখনো আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া- এসব প্রতারক চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ।
সালমা সুলতানা। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রিন রোডের ভাড়া বাসায় থাকেন। রোজা রেখে সংসার এবং সন্তান সামলিয়ে ঈদের কেনাকাটার সময় কোথায়। সময় বাঁচাতে গিয়ে সম্প্রতি প্রতারণার শিকার এই কর্মজীবী নারী বলেন, দুই বাচ্চা এবং ছোট বোনের জন্য শপিংয়ের পরিকল্পনা করেছি। হঠাৎ করে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে একটি লাইভে ছোটদের ড্রেস কালেকশন এবং বড়দের সুন্দর জামার বিজ্ঞাপনে নজর আটকে যায়। নাম সর্বস্ব এই পেজটি যে ভুয়া তখন পর্যন্ত জানতাম না। পরবর্তীতে তিনটি পোশাকের অর্ডার দেয়ার পরে তারা একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এক হাজার টাকা এডভান্স দিতে বলে। এ সময় বলা হয়, অর্ডার বাতিল করা হলে তাদের লস হয়ে যাবে। এক হাজার টাকা বিকাশ করার চারদিন পর একজন ডেলিভ্যারিম্যান এসে পোশাকগুলো দিয়ে বলে, ফুল পেমেন্ট করার আগ পর্যন্ত পোশাকের প্যাকেট খোলা যাবে না। এ সময় তার কথায় সন্দেহ হলে কৌশলে বসিয়ে রেখে প্যাকেট খুলে দেখি অনেক পুরনো এবং খুব নিম্নমানের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাক। পরবর্তীতে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ এবং ভোক্তা অধিকারে ফোন দেয়ার কথা বললে ডেলিভারি ম্যান পোশাকগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য সেই পেজের আর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। খুব অল্প টাকা হওয়ায় এ বিষয়ে আর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাছাড়া এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে অনেক সময় উল্টো ঝামেলায় পড়তে হয়।
আমিনা মিতু ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পেজে বিউটি প্রোডাক্ট অর্ডার করলে টাকা নেয়ার পরে পণ্য না দিয়ে উল্টো তাকে আইনি ঝামেলায় ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করা হয়। এই শিক্ষার্থী বলেন, অনলাইনে এর আগেও কম বেশি কেনাকাটা করেছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা পূর্বে হয়নি। সম্প্রতি বিউটি প্রোডাক্ট হিসেবে একটি ফাউন্ডেশন এবং লিপস্টিক অর্ডার করা হয়। এবং অর্ধেক টাকা আগাম পরিশোধ করেন। তিনদিন পার হলেও প্রোডাক্ট আর আসে না। পরবর্তীতে পেজে দেয়া নম্বরে ফোন দিলে তাকে বিভিন্ন যৌন হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলা হয়। এবং এরপর থেকে বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর থেকে তার মুঠোফোনে ফোন আসতে থাকে। এবং তাকে খুব বাজে ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। আত্মসম্মান বাঁচাতে রীতিমতো নিজের মুঠোফোন নম্বরটি তাকে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই শিক্ষার্থী। এদিকে মহানগর গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ বা অভিযোগ না করায় প্রতারকরা আরও বেশি সুযোগ পেয়ে যায়। গত বছরে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের দেয়া এক তথ্য বলছে, বর্তমানে অনলাইন সেবা চালু রেখেছে সাড়ে ৭০০-এর বেশি অনলাইন শপ। আর ফেসবুকে পেজ খুলে পণ্য বিক্রি করছে আরও ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান। কোনোরকম খরচ ছাড়াই কিংবা স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনাবেচার পরিবেশই মূলত এ প্ল্যাটফরমে তাদেরকে আগ্রহী করে তুলেছে। আর এ অনলাইন প্ল্যাটফরমকে কেন্দ্র করেই তৈরি হচ্ছে নানা কর্মসংস্থান; বদলে যাচ্ছে বহু তরুণ উদ্যোক্তার ভাগ্য। তবে প্রশ্ন উঠেছে নির্ভরযোগ্য সাইট নিয়ে! একদিকে যেভাবে বাড়ছে অনলাইন শপিং, সাইটগুলোতে ঠিক তেমনিভাবেই বাড়ছে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার হার। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বা চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ের নামে প্রতারণার জাল বুনেছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী অসাধু চক্র। বিভিন্ন প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অসাধু চক্রগুলো সাধারণ গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার মানবজমিনকে বলেন, প্রতি নিয়তই আমরা এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে থাকি। গত কয়েক মাসে অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক ডিজিটাল প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে এই ডিজিটাল প্রতারক চক্র। এ রকম প্রায় শতাধিক প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ। ই-কমার্সের নামে ভুঁইফোঁড় কিছু পেজ যেগুলোকে নিজস্ব সাইবার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে মনিটর করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে এবং কোনো সাইটের কাজকর্মে তাদের আচরণ এবং গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে ডার্ক ওয়েভের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন কার্যক্রম মনিটর করা হয়। এক্ষেত্রে পুলিশের একার পক্ষে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। তিনি যে সাইটটিতে অর্ডার করছেন সেটি অথেনটিক কিনা এ বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পণ্য ক্রয় করতে হবে। অর্থের পরিমাণ খুব অল্প হওয়ায় অনেকেই এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় না। এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানাতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি