1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ঈদে বেতন-বোনাস ছোট পোশাক কারখানাগুলো নিয়ে শঙ্কা | Bastob Chitro24
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

ঈদে বেতন-বোনাস ছোট পোশাক কারখানাগুলো নিয়ে শঙ্কা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২

দেশের বেশকিছু ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আগামী ঈদের আগে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে বকেয়ার দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা    সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে দাখিল করা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাসসহ সব বকেয়া আগামী ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন এবং গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। সংগঠন দুটির দাবি, অতীতে দেখা গেছে যেকোনো উৎসবের আগে মালিকরা নানা অজুহাত দাঁড় করান। ঈদ বোনাস ও বকেয়া বেতন দিতে দেরি করেন। কখনো ঈদের পরেও দেন। সুযোগ পেলে না দেয়ারও পাঁয়তারা করেন।
একাধিক সূত্র জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে।

এর ফলে ব্যবসায় যে ক্ষতি হয়েছে, এর অজুহাত দেখিয়ে দেশের শতাধিক গার্মেন্টস ফেব্রুয়ারির বেতন-ভাতা মার্চেও পরিশোধ করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য। অন্যদিকে রপ্তানি কমে যাওয়া, ক্রয়াদেশ বাতিল, কাজের অর্ডার একেবারে না পাওয়া, মূলধন স্বল্পতা, ঋণ ও প্রণোদনা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না কিছু গার্মেন্ট। এর জের ধরে যেকোনো সময় শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে বিজিএমইএ বলছে, কোনো ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কার কারণ নেই। কেননা সব কারখানাই ভালোভাবে চলছে। কিছু লোক আছে যারা সামান্য অর্থ কামানোর জন্য বাহির থেকে উস্কানি দেয়।
এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এডভোকেট মন্টু ঘোষ বলেন, প্রতি বছর ঈদ উৎসবের সময় শ্রমিকরা উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত হন। চলতি বছর ২০ রোজার মধ্যে চলতি মাসের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা না হলে ঈদের আগে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া হবে। বেসিকের সমান বোনাসের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারো যদি সর্বত্র উপেক্ষিত হয় তাহলে উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। তবে কিছু গার্মেন্ট মালিক নানা অজুহাতে প্রতি মাসে সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ পূর্ব নোটিশ ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে শ্রমিক ছাঁটাই, ওভারটাইম ভাতা ও বার্ষিক ছুটির টাকা না দেয়া, কারখানায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী না থাকা, হঠাৎ করে গার্মেন্ট কারখানা অন্যত্র সরিয়ে ফেলা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝেমধ্যেই গার্মেন্ট শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সাভার-আশুলিয়া, টঙ্গী-গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে মোট ৪ হাজার ৩৪৭টি গার্মেন্টের মধ্যে বেশকিছু কারখানায় শ্রমিকদের গত ফেব্রুয়ারির বেতন-ভাতা মার্চের মধ্যেও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব গার্মেন্টে যেকোনো সময় শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী গার্মেন্ট ফ্যাব্রিকসসহ অন্যান্য সরঞ্জামের আমদানি সংকট, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া কিংবা অর্ডার বাতিল হওয়া ইত্যাদি কারণে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সাব-কন্ট্রাক্টের গার্মেন্টগুলোর উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় কিছু গার্মেন্ট মালিক সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে থাকেন। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে শ্রমিকরা যেন তাদের বেতন-বোনাস ও অন্যান্য ভাতা সঠিকভাবে ও সময়মতো পান, সে বিষয়টির প্রতি নজরদারি প্রয়োজন। এ ছাড়া মালিকরা যদি কোনো কারখানা বন্ধ করে কিংবা শ্রমিক ছাঁটাই করেন, তাহলে সেটা যেন শ্রম আইন অনুযায়ী হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে চিহ্নিত গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে। সেগুলো হচ্ছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ম অনুযায়ী যেন প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ রোধে রুগ্‌ণ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের সমস্যা সমাধানে আর্থিক ও কারিগরি প্রণোদনাসহ সমস্যা সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষসহ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তা আগেই প্রশাসন, মালিক-শ্রমিক নেতাদের সমন্বয়ে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজধানীর দক্ষিণখান, পল্লবী, সাভার, আশুলিয়ার জিরাব এলাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, এই মুহূর্তে যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশের পোশাক কারখানা ভালো চলছে। কোনো ধরনের অসন্তোষের আশঙ্কার কারণ নেই। কিছু লোক আছে যারা সামান্য অর্থ কামানোর জন্য বাহির থেকে উস্কানি দেয়। তবে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়মিত দেখভাল করছি, যাতে কোনো ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়।
শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, বর্তমান বাজারে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নীরব দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অতীতের সব নজির অতিক্রম করেছে। তিনি অবিলম্বে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
পোশাক শ্রমিক নাসিমা আক্তার বলেন, সারাবছর আগ্রহ নিয়ে থাকি দুটি ঈদে পূর্ণাঙ্গ বোনাস পাওয়ার জন্য। কিন্তু মালিকরা নানা অজুহাত বোনাস না দেয়ার পাঁয়তারা করেন। কখনো চাপের মুখে একদম শেষ সময় দেন। কখনো আবার ঈদের পরে দেন। আমাদেরও ইচ্ছা হয় অন্যদের মতো আনন্দে ঈদ কাটাতে। ইচ্ছা হয় সন্তানকে একটি নতুন জামা কিনে দিতে। কিন্তু ওনাদের চতুরতায় সেটি সম্ভব হয় না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি