ঈদ কেনাকাটায় চাহিদা বাড়ছে ছেলে ও শিশুদের পোশাকের। বাজারে এখন ছেলে ও শিশুদের বিভিন্ন ডিজাইনের ঈদ পোশাক এসেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ডিজাইন ও নামের পোশাকের সমাহার লক্ষ করা যাচ্ছে। পণ্যের ভিন্নতায় দামের মাত্রাও রয়েছে কমবেশি। হাজারো ডিজাইন ও কালারের মাঝে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা। বিপণিবিতানগুলোতে জমে উঠেছে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি। এক দোকান থেকে অন্য দোকান ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছে ক্রেতারা। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মালিবাগ আয়েশা সুপার শপিংকমপ্লেক্স, মৌচাক, সেঞ্চুরী, হোসাফ, মগবাজারে আড়ং, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার বিভিন্ন শোরুমগুলোতে ছিলো ক্রেতাদের ভিড়। খিলগাঁও তালতলা ডিএসসিসি সুপার মার্কেটে সব বয়সি ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও শিশুদের পোশাক ও জুতা বিক্রি হয়েছে বেশি। দুই হাতে শপিং ব্যাগ ভর্তি পোশাক নিয়ে হাটছেন আরো পণ্য কেনার জন্য।
এবার ঈদে শিশুদের পোশাকের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। মৌচাক মার্কেটে বেচাকেনা শুরু হলেও দামের কারণে শিশুদের পছন্দের পোশাকের মানের সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না অভিভাবকরা। গতকাল বুধবার রাজধানীর শপিংমলগুলোতে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতাদেরও দম ফেলার ফুসরত নেই। পোশাকের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি। বেশি চাহিদা পাঞ্জাবি ও শার্টের। ছোটদের পোশাকও বিক্রি হচ্ছে। পোশাকের পাশাপাশি ভিড় জমেছে জুতার দোকাদগুলোতেও। অনেকে পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে জুতাও কিনছেন। বেইলি রোর্ডের পোশাকের দোকানগুলোতে পা ফেলার জায়গা নেই। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একই চিত্র দেখা গেছে। এখানে শাড়ি ও পাঞ্জাবি কিনতে আসছেন ক্রেতারা। বেইলি রোডের শোরুমগুলোতে বিভিন্ন পোশাকে রয়েছে বৈচিত্র্য। সুতির পাঞ্জাবির পাশাপাশি রয়েছে সিল্ক, তশর, লিলেন, খাদিসহ নানা কাপড়ের পাঞ্জাবি। ঈদ বাজারে এবার পুরুষদের পণ্যে দখল করে রেখেছে পাঞ্জাবী, শার্ট, ফতুয়া, টিশার্ট, প্যান্ট, কবলি সেট ইত্যাদি। তবে বয়স ভেদে একেক জনের পছন্দ একেক রকেমের।
কিন্তু এবছর গরম বেশি থাকার কারণে সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদা একটু বেশি। কিশোর বয়সের ছেলেদের জন্য আছে জিন্স প্যান্ট, গেবার্টিন প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, কাবলি সেট। বয়ষ্ক পুরুষের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, পায়জামা, লুঙ্গিসহ নানা ধরণের পোশাক। এবছর হালকা এমব্রয়ডারি ও সুতির উপর কাজ করা পাঞ্জাবি বেশি চলছে। কাবলি সেটও বেশি পছন্দ করছেন কিশোর বয়সের ছেলেরা। রাজধানীর বিপনিবিতানগুলো ভেদে পোশাকের দাম কম বেশি লক্ষ করা যায়। মার্কেট ভেদে পাঞ্জাবি, প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্টের দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হতে দেখা যায়। কোন কোন মার্কেটে পণ্যের দাম আরও বেশি টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রোজা ও ঈদের সময় গরম থাকার কারণে আরামদায়ক কাপড়ের পোশাক তৈরি করার চেষ্টা করছেন তারা। সুতি কাপড়কে এবার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয় হচ্ছে। সুতির পাশাপাশি লিলেন, কটন, সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক কাপড়ে তৈরি বিভিন্ন পোশাকও থাকছে। এবার ছেলেদের পাঞ্জাবিতে নতুন নতুন বৈচিত্র্য এসেছে। বিভিন্ন ডিজাইনের এবং বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবি আসছে। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাপড়। এবার অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। তাই আমরা এমনভাবে ডিজাইন করেছি যেন পোশাকের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকে।
ক্রেতারা বলছেন, এবার অন্য বছরের তুলনায় পোশাকের দাম বেশি। অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে যেসব পোশাক বিক্রি হচ্ছে এগুলোর অন্য মার্কেটের তুলনায় দাম বেশি। এবার পোশাকের দাম বেশি থাকার কারণে দুইটি পাঞ্জাবি কিনতে আসা এক ক্রেতা একটি পাঞ্জাবি ক্রয় করেই সন্তুষ্ট রয়েছেন। তার মতে এবার অনেক বিক্রেতা নিজেদের ইচ্ছা মাফিক পণ্যের দাম বসিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। আবার অনেক ক্রেতা অনলাইন থেকে পণ্য পছন্দ করে শুধু মার্কেটে এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
পীর ইয়ামেনী মার্কেটের এক বিক্রেতা জানান, ছোট ছেলে-মেয়েদের স্বচ্ছন্দ্যে ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে এবার পোশাকে ভিন্নতা আনা হয়েছে। এবার গরম থাকায় পুরুষ ও ছেলে বাচ্চারা বেশি পাঞ্জাবি কিনছে। ছোটরা নিজেরাই মা-বাবার সাথে এসে নিজেদের পোশাক পছন্দ করছে। তবে তারা কালারফুল কাপড়ই বেশি কিরতে চায়।
আবু সাইদ নামের একজন তার সন্তানকে নিয়ে এসেছেন মালিবাগের আয়েশা সুপার শপিংকমপ্লেক্সে। তার নিজের জন্য কিনবেন পাঞ্জাবি ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি ও জুতা। কিন্তু তিনি বলেন, দাম বেশি থাকার কারণে কয়েকটি দোকানে খুঁজ নিয়ে তারপর কিনবেন। যে পাঞ্জাবি আগে ৬০০ টাকায় পাওয়া যেত এবার এটা ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা দাম চাইছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান সরকার ইনকিলাবকে বলেন, রমজানের দিনগুলো বাড়ার সাথে সাথে একটু একটু করে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। তবে ঈদের আগের দিনগুলোতে জামাকাপড়সহ সব ধরণের পোশাক ও জুতার বিক্রি আরও বাড়বে। মার্কেটগুলোতে এবার ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্যে পোশাক কেনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।