1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
ঈদযাত্রায় ভোগান্তির অপেক্ষা | Bastob Chitro24
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

ঈদযাত্রায় ভোগান্তির অপেক্ষা

ঢাকা অফিস
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২

সড়ক ছাড়াও দুর্ভোগ বাড়বে রেল ও নৌ-পথের যাত্রীদের দায়িত্বশীলদের দাবি যানজটের ভোগান্তি ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে

দু’সপ্তাহ পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী থেকে লাখ লাখ মানুষ ছুটবেন গ্রামে। ঈদযাত্রায় ঘরে ফেরা মানুষদের এবার চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় যাওয়ার একমাত্র সড়কে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত নির্মাণ কাজের জন্য বেহাল দশা। এখনই ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ঢাকা থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাগুলোতে যেতে সড়কের উন্নয়নের কাজ চলছে। শিমুলিয়া-পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়াসহ সব ফেরি ঘাটেই এখনই পারাপারের জন্য মাইলের পর মাইল যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। ঢাকা-সিলেট রাস্তায় অনেক স্পটে যানজট নিত্যদিনই লাগছে। ঈদ উপলক্ষে আগাম এসব রাস্তা যানবাহনের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত না করায় ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে সড়কের যানজট।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ঈদ উৎসব উপলক্ষে পরিবহনে চাপ বাড়বেই। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুধু অভিযানসর্বস্ব হলে চলবে না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। ঈদের সময়ে এক রুটের যানবাহন আরেকটি রুটে যায় তখন গাড়ির চাপও বেড়ে যায়। আগে থেকেই কিন্তু প্রস্তুতি নিলে সমাধান অনেক সহজ হয়।

রমজান শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ভয়াবহ যানজট নগরবাসীর জন্য নিত্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানাসহ সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে খোলা। অন্যদিকে রাজধানীতে চলমান রয়েছে বেশকয়েকটি মেগাপ্রকল্পের কাজ। এছাড়াও রাজধানীর বাইরে মহাসড়কগুলোতে চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ। এসব কারণে এবছর ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছুক নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুধু সড়কে নয়, দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে রেল ও নৌ-পথের যাত্রীদেরও। আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার রেলের টিকিট কিনতে হলে অবশ্যই নিজের পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ টিকিট কিনতে পারবেন না। এতে খেটে খাওয়া দিনমজুর ও রাজধানীতে কাজ করা রিকশা চলকদের যাদের কাছে পরিচয়পত্র নেই তাদের মহাসঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একারণে ভোগান্তি বাড়বে রেলযাত্রীদের। ঈদে ৬ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এবার বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ২৩ এপ্রিল থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বুধবার রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, টিকিট যার, ভ্রমণ তার এই সেøাগান বাস্তবায়নে যাত্রীদের এনআইডি/জন্মসনদ ফটোকপি কাউন্টারে প্রদর্শনপূর্বক টিকিট ক্রয় করতে হবে।

মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা বেশি। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানবাহনের জট তৈরির আশঙ্কা করছেন চালক ও যাত্রীরা। ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কার কারণ সড়কে নির্মাণকাজ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশেও সংস্কারকাজ চলছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের বড় সমস্যা পদ্মা পাড়ি দেয়া।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া এলাকায় চার লেনের সংস্কারকাজের কারণে দুই-তিন কিলোমিটার এলাকায় যানজট লাগছে। আর এ যানজট গিয়ে ঠেকছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, বুড়িচং উপজেলার নিমসার তরকারি বাজার, আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা নগরের পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রামে মহাসড়ক এলাকায় বাজারের কারণে যানজট হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বাজার বসা এবং সংস্কারকাজ চলমান থাকায় ঈদ যাত্রায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাস চালক কবির বলেন, সামনে ঈদ এই রুটে আমরাও যানজটের আশঙ্কা করি। একই রাস্তা দিয়ে অনেক এলাকার গাড়ি চলার করণেও যানজট বাড়ে। এই রাস্তার বেশিরভাগ এলাকার বাজার থাকার কারণে গাড়ি দ্রুত চালানো যায় না। ট্রাক ও কভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন করার কারণে এসব সড়কে জটলা লেগেই থাকে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে গাউসিয়া বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়ক দখল করে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক পথে চলাচলকারী যানবাহনের স্ট্যান্ড ও অবৈধ পার্কিং এসব যানজটের প্রধান কারণ। সরেজমিনে দেখা যায় কাঁচপুর সেতুর নিচে শ্যামবাজার বাসস্ট্যান্ড ও তারাব চৌরাস্তায় মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা লেগুনাস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামার করণে যানজট সৃষ্টি হয় সবসময়। ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচের অংশে রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার দখলে সপ্তাহের প্রত্যেক দিনই থাকে যানজট। তারাবো বিশ্ব রোডের পাশে রয়েছে পৌরসভার ময়লার ডাম্পিং স্টেশন। এসব ডাম্পিংয়ের ময়লা ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের ওপরে। এ কারণে এ সড়কে গাড়ি স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারে না। এবং সিলেট, ভৈরব ও নরসিংদীর গাড়িগুলো এখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানোর কারণে এই মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

বগুড়া ব্যুরো জানায় : ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ফোরলেন প্রজেক্টের যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত অংশে নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে যানবাহনের চালক, হেলপার ও যাত্রী সাধারণকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী কোচ, বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের চালক ও হেলপাররা বলেছেন, বিশৃঙ্খল নির্মাণকাজ ও এলোমেলোভাবে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আটকা পড়ে পরিবহন। কোথাও কিছু সময়ের জন্য একটা দুইটা যানবাহন আটকা পড়লেও সেগুলোর আগেপিছে দাঁড়িয়ে যায় শত শত যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দুঃসহ গরমের কারণে শতশত যানবাহনে আটকে পড়া যানবাহনের মহিলা, শিশু, বৃদ্ধাসহ সববয়সী যাত্রীদের অসহনীয় ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার তাগাদা থাকলেও অতিসম্প্রতি নির্মাণ সামগ্রী রড সিমেন্টের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিহার কারণেই ফোরলেন প্রকল্পের কাজ শিডিউল মোতাবেক হচ্ছে না।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদার সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পশ্চিমাঞ্চলের অংশে প্রায় প্রতিনিয়ত কমবেশি যানজট লেগে থাকত। কখনো ধীরগতি কখনো স্থির। এই সমস্যা সমাধানে ঈদের আগে ১৬টি জেলার ঘরমুখী মানুষের যানজট থেকে নিস্তার দিতে নলকা সেতু খুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে ঈদে ঘরমুখী মানুষের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল গোল চত্বর হয়ে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের কারণে প্রতি বছর ভোগান্তির শিকার হতে হয় ঈদে ঘরমুখো মানুষের। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে (ঢাকা-রংপুর) মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। তাই এ বছরও ব্যাপক যানজট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে নলকায় নতুন সেতুর কাজ শেষ না হলে যানজটে পড়তে পারেন চালক ও যাত্রীরা। তবে ঈদের আগেই সেতুর এক লেন খুলে দিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঢাকা-সিরাজগঞ্জ রুটের জেনিন এন্টারপ্রাইজের বাসচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যদি নলকা সেতু খুলে না দেয়া হয় তাহলে যানজট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এছাড়া মহাসড়কের কাজ শেষ না হলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

তবে মহাসড়কের যানজট ও ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ঈদের ছুটির আগেই নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. এখলাছ উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা মহাসড়কের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আশা করছি ঈদে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। যানজট নিরসনে ২০ রমজানের পর থেকে মহাসড়কে কাজ করবে ট্রাফিক পুলিশ। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, ভোগান্তি কমাতে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করতে ৩০০ পুলিশ সদস্য চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, দুর্ভোগের অপর নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেই লেগে যায় মাইলের পর মাইল যানজট। সারা বছর একই চিত্র দেখা যায় সড়কটিতে। আর ঈদ আসলে তো কথাই নেই। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়কে ৬ লেনে চলাচল করে যানবাহন। এর মধ্যে আবার কয়েকটি আন্ডারপাসও চলমান রয়েছে। তবে বিপত্তি ঘটে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে। সেখানে দুই লেনের সড়কে চলাচল করে ৬ লেনের গাড়ি। এছাড়াও এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঁচু নিচু থাকায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চালাতে পারেন না চালকরা। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈদে যে কোনো মূল্যে সড়কে যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালাতে দেয়া হবে না।

মো. হেদায়েত উল্লাহ টঙ্গী থেকে জানান, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান হলেও ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড, কলেজ গেট, সাতাইশ-গাজীপুরা বাস স্ট্যান্ড, ভোগড়া বাইপাস ও চান্দনা চৌরাস্তা এই পাঁচটি পয়েন্ট রাজধানীতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেলে এই মহাসড়কে আরো তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছে যানবাহন চালক ও যাত্রীসাধারণ। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল এ মহাসড়ক দুটি দিয়ে ওই জেলাসমূহের মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকে। প্রতিদিন সড়ক দুটি দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এছাড়াও প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্যবাহী যানবাহন, ট্রাক, লরি এ পথ দিয়ে চলাচল করে।

ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর শিববাড়ি পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজের দীর্ঘসূত্রিতার দরুন এই মহাসড়কের অধিকাংশজুড়ে খানাখন্দে ভরা ছিল। গত কয়েক মাসে মহাসড়কের ৬ লেনের মধ্যে ২ লেন মোটামুটি দৃশ্যমান হওয়ায় আগের তুলনায় যানচলাচলে কিছুটা গতি এসেছে। তবে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে উক্ত ২ লেন খুব সরু হওয়ায় এবং পূর্ব পশ্চিম থেকে যানবাহন ক্রসিং হওয়ায় প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আব্দুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে পথেই বসে থাকতে হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তার অংশেই গত কয়েক বছর ধরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। ফলে নানা কারণে ১২ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে সময় লাগে ২-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের অধীন সড়কের ওপরে ফ্লাইওভারের নিচে কার্পেটিং এখনো সম্পন্ন হয়নি। নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের অধিকাংশ জুড়ে ৬ লেনের স্থলে মাত্র ২ লেন চালু আছে।

গাজীপুরের পাঁচ সহস্রাধিক ছোট-বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা অধিকাংশই ঈদে বাড়িতে যান। এ ছাড়া তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিতে না পারলে তারা রাস্তায় নেমে আসেন। এবারও তেমনটি হলে তাদের অবরোধেও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। গাজীপুরের ভয়াবহ যানজটের মধ্যে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইক মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

বিআরটি প্রকল্পের সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ঈদের আগে বিআরটি প্রকল্পের অংশের কাজ বিশেষত নিচের কার্পেটিং সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ঈদের সাত দিন আগেই এ সড়ক সম্পূর্ণভাবে কার্পেটিংসহ চলাচল উপযোগী করা হবে, যাতে ঈদযাত্রায় যানজট নিয়ে কোনো ভোগান্তি না হয়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এবং ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পনা নিয়েছি। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০ পুলিশ সদস্য মহানগরী এলাকার মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত আরো ১০০ জন পুলিশ সদস্য মহাসড়কে নিয়োজিত থাকবে, যারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ঈদ সামনে রেখে পোশাক কারখানার পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে এবং মহাসড়কে যানজট তৈরি না হয় এ জন্য আমরা বিআরটি কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।

মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) থেকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া মাদারীপুরের বামলাবাজার নৌ-পথে নাব্যতা সঙ্কট, ফেরি সঙ্কটসহ নানা সমস্যা বিরাজ করছে। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপে গত দুই বছরের ন্যায় ঘাটে এবারও বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মা সেতুর পিলারে একাধিকবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এরপর দুর্ঘটনা এড়াতে গত বছর ১৮ আগস্ট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ৪৭ দিন পর গত ৫ অক্টোবর সীমিত আকারে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে তীব্র স্রোতের কারণে ছয় দিন চলার পর আবারো ফেরি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ৮ নভেম্বর থেকে পুনরায় ফেরি চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে কে-টাইপের তিনটি শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটে দুটি ফেরিসহ দুই রুটে মোট পাঁচটি ফেরি চলাচল করছে। নাব্যতা সঙ্কটের পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছোট যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। সন্ধ্যার পর শিমুলিয়া থেকে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ফেরিঘাটে দুটি ফেরি চলাচল করলেও অল্পসংখ্যক ভারী যানবাহন পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম জানান, ঈদের আগে ফেরি বাড়ানো হবে। তিনটি ছোট ফেরি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে ঈদের আগে এই ফেরি তিনটি বহরে যুক্ত হবে। যেহেতু বাস ট্রাক চলাচল করে না, এবার লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু আছে। গতবার লকডাউন ছিল এবার নেই, ফলে গতবারের মতো এবার আর ভোগান্তি থাকবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি