1. rashidarita21@gmail.com : bastobchitro :
আত্মহত্যায় নারীদের সংখ্যাই বেশি | Bastob Chitro24
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন

আত্মহত্যায় নারীদের সংখ্যাই বেশি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আজ আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর এ দিবসটি পালন হয়ে আসছে। তিন বছর ধরে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কাজের মাঝে জাগাই আশা’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বে আত্মহত্যা করে ৮ লাখ মানুষ। দৈনিক এ হার ২ হাজার ১৯১ এবং প্রতি লাখে ১৬ জন। গত ৫০ বছরে সারাবিশ্বে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবছরই এ হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এশিয়ায় আবেগপ্রবণতা আত্মহত্যার পেছনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবিএসের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বছরে আত্মহত্যা করছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন ৩৫ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ পানে আত্মহত্যা করে।

বিশে^ পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা বেশি হলেও বাংলাদেশে নারী আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা বেশি। বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৭ শতাংশ নারী আত্মহত্যা করেনÑ যেখানে পুরুষ ৪৩ শতাংশ। নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ৮ হাজার ২২৮টি ও পুরুষের ৬ হাজার ২০৮টি। আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়ে আছেন নারী শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে গড়ে প্রায় ৪৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমঘটিত কারণেই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছে আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করা ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’। এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার : আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি?’ শীর্ষক সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে সংস্থাটি। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৯৪ জনই ছিল স্কুলশিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সীই ১৬০ জন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫০ জন ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৪৪ জন ছিলেন। তথ্য অনুসারে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৬১ শতাংশ। আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ৭৮ শতাংশই ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সী। আর প্রেমঘটিত কারণে সবচেয়ে বেশিÑ ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। আমাদের দেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি এবং তাদের সবার বয়সই ১৪ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। কেন নারীদের আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি? এ প্রশ্নটি এলেই পরিষ্কার হয় যে, এটি এক পুরুষতান্ত্রিক ও ভোগতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাÑ যেখানে নারীকে ‘ভোগপণ্য’ এবং ‘খাটো’ হিসেবে দেখা হয়। নারী মাত্রই তার কোনো অধিকারবোধ থাকতে নেই, ভালো লাগা-মন্দ লাগার বালাই থাকতে নেই। যৌতুকের কারণে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, পারিবারিক সহিংসতা, নারী হওয়ার কারণে অবদমিত করে রাখার সামাজিক মানসিকতা ও অতিরিক্ত চাপ অর্থাৎ সামাজিক, পারিবারিক, জৈবিকÑ এসব কারণ নারীকে আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করে। আর অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অভিমান, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, পড়াশোনার চাপ, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়া, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, চুরি, মিথ্যা অপবাদ, মানসিক সমস্যা, স্বামী পছন্দ না হওয়া, বাসা থেকে মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়া ইত্যাদি।
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা থেকে জন্ম নিচ্ছে মানসিক অবসাদ। নারীরা এ অবসাদে বেশি ভোগেন, বিশেষ করে বিবাহিতাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। ওই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করছেন তারা। এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছেÑ ‘মানসিক অবসাদ যে একটা অসুখ, তার যে চিকিৎসা দরকার; সেটি মনে রাখেন না শতকরা ৯০ জন।’ এ ছাড়া আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য মানুষকে হতাশায় ফেলে দিচ্ছে। আর এ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেও এমন দেখা যাচ্ছে।

আশার কথা হচ্ছে, যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবেÑ যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, আত্মহত্যার ঝুঁকি বিষয়ে সচেতনতা, ই-স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত মনোচিকিৎসকের ব্যবস্থা করা, আত্মহত্যা সম্পর্কিত বিবেচনাপ্রসূত সংবাদ পরিবেশন, কাউন্সেলিংয়ের জন্য হটলাইন সার্ভিস চালুÑ এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের স্ক্রিন ও মোবাইল ফোন আসক্তি দূর করতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা, শরীরচর্চা, খেলাধুলা, নিজ নিজ ধর্মচর্চা, আত্মোন্নয়ন ও ধ্যানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যাÑ বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সূত্র দৈনিক আমাদের সময়

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
প্রযুক্তি সহায়তায়: রিহোস্ট বিডি